কনসাশনেস এবং অস্তিত্ব কথন

কনসাশনেস এবং অস্তিত্ব কথন

প্রত্যয় একদিন বাজারে গেলো খাসির মাংস কিনতে। কিন্তু হুট করে একটা বিষয় তার মনে চিন্তার উদ্রেক ঘটালো। সে লক্ষ করলো যে কসাইখানার সামনে অনেকগুলো ছাগল বাধা। এগুলো থেকে ধরে ধরে কসাই কিছুক্ষণ পর পর একটা একটা করে জবাই দিচ্ছে। কিন্তু যে বিষয়টা সে খেয়াল করলো সেটা হলো অন্য ছাগলগুলোর আচরণ! মানে তাদেরই কেউ জবাই হচ্ছে আর তাদের মধ্যে কোনো ভ্রুক্ষেপই নাই! নির্দ্বিধায় খাচ্ছে, জাবর কাটছে!
তারমানে কি এই যে তাদের মাঝে মৃত্যু বিষয়ক কোনো ধারণা নেই?!? নাকি অন্যকিছু? নাকি মানুষ মৃত্যুকে যেরকম ভয়ঙ্কর ভাবে তারা সেরকম ভাবেনা?!?

হ্যাঁ, ভয়! ভয় জিনিশটা ইমোশনাল। কিন্তু তারাও তো ভয় পায়। যদি তাদের কোনো এরকম অনুভূতি নাইই থাকতো তাহলে ভিন্ন কথা ছিলো। কিন্তু মৃত্যুকে তারা ভয় পায়না কেনো? চিন্তা করেন তো যে আপনার সামনে আরেকটা মানুষকে জবাই দেওয়া হচ্ছে আর আপনি পাশে বসেই আরামছে নির্লিপ্ত ভাবে মিষ্টি খাচ্ছেন!

যাহোক, কনসাসনেস জিনিসটা কি আসোলে?!? আমি যা বুঝি তা হচ্ছে এই জিনিশটা একা আইসোলেটেড কোনো বিষয় না। আমরা যদি একধাপ নিচু লেভেলের ক্রিয়েচার হতাম এবং আমাদের একধাপ উপরের ক্রিয়েচারদের খাদ্য হতাম, অর্থাৎ আমরা ছাগল এবং তারা মানুষ তাহলে কি হতো?

অবশ্যই কিছু একটা হতো। পার্থক্য ওই কনসাইন্সেই। আমার মনে হয়না আমরা বিষয়টা ওভাবে মেনে নিতাম। মানে কাউকে জবাই দিচ্ছে আর আমরা পাশে বসে বাদাম চিবাতাম। আমরা সম্মিলিত ভাবে কিছু একটা করতাম।

অনেকে আবার বুদ্ধিমত্তা এবং কনসাসনেস কে গুলিয়ে ফেলে। এরা এক হওয়া তো দুরে থাক, কাছাকাছিও না। বুদ্ধিমত্তার অনেক ধরনের সংজ্ঞা দেওয়া হয় কিন্তু আমার কাছে সবচাইতে গ্রহণ যোগ্য মনে হয় এটাকেঃ বুদ্ধিমত্তা হচ্ছে আশেপাশের পরিবেশকে ম্যানিপুলেট করার ক্ষমতা।

তো প্রত্যয়ের মনে এই ছাগলের নির্লিপ্ততার বিষয়টা এবং সর্বোপরি মৃত্যুর বিষয়টা, একদিন সব থাকবে সে থাকবেনা এই বিভৎস চিন্তাটা খুব জোরেশোরে নাড়া দিলো।
সে ভাবলো কিভাবে আমার অস্তিত্ব টিকাতে পারি? কাজের মাধ্যমে? এটাতো নীতিগত ব্যাপার।
সন্তানদের মাধ্যমে? এটাতো পিওর জৈবিক ব্যাপার।
আমিতো আমার কনসাসনেস, আমার আমিত্বকে টিকিয়ে রাখতে চাই।

সে ভাবতে লাগলো! অনেক ভাবনা চিন্তার পর সে তার ডাক্তার বন্ধু ডাক্তার আলিফ এবং তার শিক্ষক গবেষক ইমতিয়াজের সাথে আলোচনা করলো। উদ্দেশ্য? তার শরীরের মরটাল কম্পোনেন্ট গুলো রিপ্লেস করা। একটা এন্ড্রয়েড হওয়া।

কিন্তু সমস্যা হলো একেবারে সব কম্পোনেন্ট রিপ্লেস করার মতো প্রযুক্তি এখনো আবিষ্কার হয়নি। তাই সিদ্ধান্ত হলো যে তার মস্তিষ্কের অংশগুলো প্রথমে গ্রাজুয়ালি মেকানিক কম্পোনেন্ট দিয়ে রিপ্লেস করা হবে। অর্থাৎ কার্বন মস্তিষ্কের যায়গায় সিলিকন চিপ।

সিদ্ধান্ত হলো যে ১০% করে করে কাজটা সম্পন্ন করা হবে। এর কারণ শুধুমাত্র সেফটি কিংবা প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা নয়। বলা বাহুল্য যে প্রত্যয়ের উদ্দেশ্য ফিজিক্যাল ইম্যরটালিটি নয়, তার কনসাইন্সকে টিকিয়ে রাখা। তার আমিত্বকে অমরত্ব দেওয়া।
কিন্তু এধরণের অপারেশন আগে কখনো করা হয়নি। তাই তারা তিনজনে এই সিদ্ধান্ত নেয় যে গ্রাজুয়ালি অপারেশনটা করবেন এবং ইভ্যালুয়েশন করবেন একটা প্রশ্নের মাধ্যমেঃ প্রত্যয়কে সিম্পল একটা প্রশ্ন করা হবে “তুমি কে?”

তো ধরা যাক প্রত্যয় প্রত্যেকবারই উত্তর দিলোঃ আমি প্রত্যয়! (সত্য মিথ্যা যাচাইয়ের উপায় আপাতত নাই)

এরকম করে তার পুরো শরীরের কম্পোনেন্ট গুলো পুরোপুরিভাবে সিলিকনাইজড হয়ে গেলো।
শেষবারও সে উত্তর দিলো যে সে প্রত্যয়।

কিন্তু বাগড়া লাগলো আলিফ এবং ইমতিয়াজের মধ্যে। আলিফ ওই জিনিসটাকে এখন আর প্রত্যয় বলে মানতে নারাজ। (ডাক্তার হিসেবে বায়োলজিক্যাল বায়াস)
কিন্তু ইমতিয়াজ আবার জিনিসটাকে জিনিস বলতেও নারাজ, তার মতে ওটা প্রত্যয়ই, বরং তাকে জিনিস বলাটা তার ভাষ্য অনুযায়ী অসম্মানজনক। (এ আই রিসার্চার বায়াস)

তখন প্রত্যয় নিজেও বিভ্রান্ত। এক্সিস্টেন্সিয়াল ক্রাইসিসে পড়ে গেলো। সবকিছু ছাড়িয়ে সেও ভাবতে লাগলোঃ কে সঠিক? আলিফ নাকি ইমতিয়াজ?!? 🤔

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

মন্তব্য করুন